দীর্ঘ অর্থনৈতিক সঙ্কটের পর ২৮ জুলাই, ২০২৪ ভেনিজুয়েলায় অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ভেনিজুয়েলার জনগণের মধ্যে পরিবর্তন ও আশার সঞ্চার করেছিল।
নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্যে ভেনিজুয়েলার সরকার আমন্ত্রিত গণতন্ত্র উন্নয়নে কর্মরত মার্কিন ভিত্তিক সংস্থা কার্টার কেন্দ্রের মতে, একটি “সীমাবদ্ধ স্বাধীনতার পরিবেশে” সংঘটিত প্রক্রিয়াটিতে ভেনিজুয়েলার নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ (কনসেজো ন্যাসিওনাল ইলেক্টোরাল) মাদুরো সরকারের প্রতি স্পষ্ট পক্ষপাত প্রদর্শন করেছে।
বিরোধী প্রার্থী মারিয়া করিনা মাচাদোকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি। মাচাদোর বিকল্প কাউকে নিবন্ধন করতে ব্যর্থ বিরোধী দল ইতোমধ্যে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে নিবন্ধিত প্রাক্তন কূটনীতিক এডমুন্ডো গনজালেজ উরুতিয়াকে সমর্থন করতে বাধ্য হয়।
স্বল্প নিবন্ধনের সময়সীমা, সীমিত প্রকাশ্য তথ্য ও অস্বাভাবিক আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে বিদেশে নাগরিকরাও নির্বাচনে অংশগ্রহণে যথেষ্ট বাধার সম্মুখীন হয়। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের নথি অনুসারে, ২০২৩ সালের শেষের দিকে তিন কোটির বেশি জনসংখ্যার দেশ “ভেনিজুয়েলার সারাবিশ্বে ৭৭ লক্ষেরও বেশি শরণার্থী ও অভিবাসী” ছিল। নির্বাচনের মুহুর্তে যোগ্য প্রায় ৩৫-৫৫ লক্ষ প্রবাসী ভেনিজুয়েলার নাগরিকদের ভোট দেওয়ার জন্যে মাত্র ৬৯ হাজার নিবন্ধিত হলে তাদের অধিকাংশই নির্বাচন থেকে বাদ পড়ে যায়।
দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক সমাজ প্রচেষ্টার একটি নির্বাচনী স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, মাচাদো ও গনজালেজ একসঙ্গে প্রচারণা চালিয়েছিল। তাদের প্রচারাভিযানের বার্তা প্রবাসীদের পরিবারের সাথে পুনর্মিলনের মাধ্যমে একটি ভাল ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতির প্রতি মনোনিবেশ করেছিল।
ভেনিজুয়েলার বর্তমান রাষ্ট্রপতি নিকোলাস মাদুরো পুনঃনির্বাচনী প্রচারাভিযান তাদের সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই প্রচেষ্টাকে তুলে ধরে যুক্তি দেয় একমাত্র তিনিই দেশটিতে শান্তির নিশ্চয়তা দিতে পারেন।
রাষ্ট্র বিস্তারিত ফলাফল প্রদান না করেই ২৮ জুলাই, ২০২৪ মধ্যরাতের কিছু আগে ভেনিজুয়েলার নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ নিকোলাস মাদুরোকে নির্বাচনে বিজয়ী ঘোষণা করে। কয়েক ঘন্টা পরে মারিয়া করিনা মাচাদো একটি সংবাদ সম্মেলন করে, দাবি করেন তাদের কাছে থাকা নির্বাচনী টালির একটি প্রতিনিধিত্বমূলক নমুনা অনুসারে এডমুন্ডো গনজালেজ উরুতিয়া স্পষ্ট বিজয়ী। সংখ্যা দিয়ে সমর্থিত ও নির্বাচনী সাক্ষীর প্রতিবেদনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিরোধীদের প্রকাশিত ফলাফল মাদুরোর চেয়ে গনজালেজ উরুতিয়ার দ্বিগুণ ভোট পাওয়ার ইঙ্গিত দেয়।
নির্বাচনের পরে বিরোধীদের প্রকাশিত ফলাফলকে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিতে ঐতিহাসিকভাবে শ্যাভেজপন্থী এলাকাগুলিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। প্রথম দুই দিনে এক হাজারেরও বেশি বেসামরিক নাগরিককে আটক ও ২১ জনেরও বেশি লোক নিহত হয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ ভেনিজুয়েলার নির্বাচনী কর্তৃপক্ষকে নির্বাচনের বিস্তারিত ফলাফল প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছে।
বর্ণনা: “আমাদের ভয় করো! তুমি আমাদের সাথে না থাকলে আমরা তোমার পিছু নেবো“
শাসকগোষ্ঠীর মতে, বিরোধীদের সাথে সম্পৃক্ত সাম্রাজ্যবাদ ভেনিজুয়েলায় চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের প্রধান কারণ এবং ভেনিজুয়েলার জনগণের স্বার্থ রক্ষার পরিবর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এজেন্ডা তুলে ধরা বিরোধী নেতৃত্বাধীন এই নোংরা খেলার সকল দাবিই মিথ্যা।
সরকারি কর্তারা জোর দিয়ে বলেছে বর্তমান প্রশাসন বিশ্বাস করে ভোটদানে বাধা দেওয়ার কৌশল শাসনকে অপ্রস্তুত করা বিরোধীদের প্রকাশিত ফলাফলের পরিবর্তে একটি অনুকূল ফলাফল নিশ্চিত করবে। এদিকে ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা’র মতো ঐতিহ্যবাহী আঞ্চলিক মিত্ররা মাদুরোকে নির্বাচনে বিজয়ী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার আগে ফলাফলের প্রমাণ দাবি করেছে। ফলে সরকার একরকম উদযাপন না করেই ইতোপূর্বে কখনো লক্ষ্যবস্তু না করা নির্বাচনী সাক্ষী ও ভোটারদের দমনের একটি নতুন তরঙ্গ অপারেশন টুন টুন (ঠক ঠক অভিযান) এর মতো ভিন্নমতকে লক্ষ্যবস্তু ও অপরাধীকরণের নতুন উদ্যোগের বিজ্ঞাপন দিয়ে তার দমনমূলক কৌশলগুলি আরো জোরদার করেছে।
শাসকগোষ্ঠী তারপর ভেনিজুয়েলা সরকারকে সমর্থন না করে প্রশ্নবিদ্ধ করে অসন্তোষের চিহ্ন প্রদর্শন রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল বলে সেটা করতে ভয় পাওয়ার বার্তাটি ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণ ও দমনের দিকে মনোনিবেশ করে। তারা তাদের মতে “সাইবার-ফ্যাসিবাদী” অভ্যুত্থান বন্ধ করতে সামাজিক গণমাধ্যমে ভিন্নমতের বিষয়বস্তু প্রকাশ করা লোকেদের লক্ষ্যবস্তু করাসহ এমনকি মঞ্চগুলিকে নিষিদ্ধ করার মতো সমস্ত শক্তি ব্যবহারের ঘোষণা করেছে।
কীভাবে এই আখ্যান অনলাইনে প্রচারিত হয়েছে
সম্প্রতি নিযুক্ত স্বরাষ্ট্র, বিচার ও শান্তি মন্ত্রী দিওসদাদো কাবেইয়ো ইনস্টাগ্রামে “ঠক ঠক অভিযান” এর দক্ষতার বিজ্ঞাপন দিয়েছেন।
ভিডিওটি প্রথমে নিকোলাস মাদুরো ও দিওসদাদো কাবেইয়োকে অপমান করার একটি টিকটক ক্লিপ দেখায়। তারপরে স’য়ের ভয়ংকর চলচ্চিত্র পাপেট বিলি “এবার খেলা শুরু হোক” বলে বিপরীত গণনা শুরু করে ধারাবাহিক চিত্রে মধ্যরাতে রাষ্ট্রীয় বাহিনী একটি লোককে আটক দেখায় যে পরে ক্ষমা চায়।
ঠক ঠক ভেনিজুয়েলার একটি বিখ্যাত বড়দিনের গানের নামও। গানের কোরাস বলে, “ঠক ঠক, কে আছেন? শান্তিকামী মানুষ, দরজা খুলুন। বড়দিন এসে গেছে।”
ঠক ঠক অভিযানের স্লোগান হলো “সিন ইয়োরাদেরা”, যার অর্থ অন্য মানুষের কষ্ট খারিজ করে দিতে ভেনিজুয়েলায় ব্যবহৃত একটি সাধারণ অভিব্যক্তি, কোন হাহাকার বা কান্নাকাটি নয়।
ইনস্টাগ্রামে ৩৫ হাজারের বেশি লাইক পাওয়া বিষয়বস্তুটি রাষ্ট্রীয় বাহিনী সংঘটিত দমনমূলক কৌশল ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করে দেশে প্রদর্শিত সকল অসন্তোষ প্রদর্শনের বিরুদ্ধে ঘৃণা উস্কে দেয় বলে আমাদের নাগরিক সূচকে সম্ভাব্য সর্বনিম্ন স্থান -৩ লাভ করেছে। বিষয়বস্তুটির সম্পূর্ণ বিশ্লেষণ দেখুন।
আখ্যান: আমাদের ভাগাভাগি বেশিরভাগ সংগ্রাম আমাদের একত্রিত করেছে
বর্তমান পরিস্থিতি এই অঞ্চলে ভেনিজুয়েলাবাসীর বাম-ডান ঐতিহ্যগত মেরুকরণের দ্বিধা কাটিয়ে ওঠার অনুভূতির প্রমাণ দেয়। ভেনিজুয়েলার ভেতরে একটি সাধারণ বিশ্বাস মতাদর্শি আলোচনা ও সংঘাত এখন আর অগ্রাধিকার নয়। এখন মনোযোগ ভেনিজুয়েলার জনগণকে বিভক্ত করার উপাদানের পরিবর্তে চ্যালেঞ্জগুলির উপর।
অনেকেই মাচাদো এবং গনজালেজের ভেনিজুয়েলার সকল সামাজিক শ্রেণীর দেশকে একত্রিত করার আকাঙ্ক্ষায় বহু বছর বিচ্ছিন্ন থাকতে বাধ্য পরিবারগুলির পুণর্মিলন ঘটানো ভাল ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতিতে অনুপ্রাণিত হয়েছিল।
এই আখ্যান কীভাবে অনলাইনে জীবন লাভ করেছে
ভিভিপেরিওদিস্তাসের ভাগাভাগি করা একটি ভিডিওতে ক্যারিরুবানা পৌরসভার পুলিশের সদস্যরা তাদের ইউনিফর্ম খুলে ফেলেছে, তাদের কেউ কেউ কাঁদতে কাঁদতে বিক্ষোভকারীদের দলের সামনে গিয়ে করতালি দিতে দিতে “স্বাধীনতা” স্লোগান দিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা তাদের পোশাক খুলে ফেলে প্রতিবাদকারীদের স্পষ্টভাবে বলেছে তারা আর ঊর্ধ্বতনদের তাদের দমন চালিয়ে যাওয়ার আদেশ মানবে না।
গত ২৪ বছর ধরে ক্ষমতাসীন ভেনিজুয়েলার সংযুক্ত সমাজতান্ত্রিক দল (পিএসিউভি)- প্রাক্তন ভি প্রজাতান্ত্রিক আন্দোলন (এমভিআর) – শাসিত পৌরসভা ক্যারিরুবানাতে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আমাদের নাগরিক মাপকাঠিতে বিষয়টি +২ স্থান পেয়েছে। এটি শাসকগোষ্ঠীর আদেশ অমান্য করে জনগণের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিতে ও দেশের সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্যে কর্মকর্তাদের ইচ্ছে প্রদর্শন করে। বিষয়টির সম্পূর্ণ বিশ্লেষণ দেখুন।
নির্বাচনের শুরু থেকেই গ্লোবাল ভয়েসেস ভেনিজুয়েলা সম্পর্কে আমাদের সম্প্রদায়ের গল্প নিয়ে বিশেষ কভারেজ প্রকাশ করেছে।
আরো পড়ুন: গণতন্ত্রের জন্যে ভেনিজুয়েলার লড়াই
নাগরিক গণমাধ্যম মানমন্দিরের খবর
আমরা আনন্দের সাথে জানাচ্ছি আমাদের ডেটা শাসন মানমন্দিরের গল্পগুলির সাথে আন্ডারটোনস দ্বি-সাপ্তাহিকভাবে আবার শুরু হতে যাচ্ছে। আমাদের গবেষকদের দল ২০২৪ সালের শুরু থেকে এল সালভাদর, ব্রাজিল, তুরস্ক, সুদান এবং ভারতে শাসন, নিয়ন্ত্রণ ও নীতির জন্যে ব্যবহৃত ডেটা সম্পর্কিত আখ্যান সনাক্ত করতে ও বুঝতে শুরু করেছে। আমরা আপনার সাথে সেগুলি ভাগ করে নিতে মুখিয়ে আছি। ইতোমধ্যে না হয়ে থাকলে আপনি গ্রাহক হোন।