ফিলিপাইনের রাজধানী অঞ্চলের দক্ষিণ ও উত্তরে অবস্থিত কাভিতে ও বাতাআন প্রদেশে তেল ছড়িয়ে পড়ার বিপর্যয়ের প্রায় এক মাস পরেও অন্তত ৫০ হাজার জেলে ও তাদের পরিবারগুলি ক্রমাগত পরিণতির সাথে লড়াই করছে।
বাতাআনের জলে ২৫ জুলাই ১৪ লক্ষ লিটার শিল্প জ্বালানী নিয়ে একটি তেলের ট্যাঙ্কার ডুবে যাওয়ার দুই দিন পরে আবার বাতাআনে ৫৫ হাজার লিটার ডিজেল বহনকারী আরেকটি তেলের ট্যাঙ্কার উল্টে যায়। এদিকে একই প্রদেশে তৃতীয় আরেকটি জ্বালানি ট্যাঙ্কার পরিত্যক্ত হয়েছে। দুর্ঘটনাগুলি হয়তো এই অঞ্চলে বিশেষত টাইফুন কারিনার (আন্তর্জাতিক নাম: গেইমি) কারণে সৃষ্ট বিপজ্জনক সমুদ্র পরিস্থিতি ও অতিরিক্ত বৃষ্টির সাথে যুক্ত।
প্রায় ৮৪ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে ছড়িয়ে পড়া তেলের প্রভাব ম্যানিলা উপসাগরের অর্ধেকটাকে প্রভাবিত করেছে বলে অনুমান করা যায়। কাভিতের আটটি উপকূলীয় শহরে দুর্যোগ ঘোষণা করা হয়েছে।
বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পরিষ্কারের অভিযান ও জরুরি ত্রাণ বিতরণে নেতৃত্ব দিয়েছে। কাভিতেতে জারি করা মাছ নিষেধাজ্ঞা প্রায় ৩০ হাজার জেলেদের জীবিকাকে প্রভাবিত করে।
উপকূল রক্ষীরা ১৮ আগস্ট পর্যন্তশুধু ৪২ হাজার লিটার তেল উদ্ধারের কথা জানিয়েছে।
বেশিরভাগ এলাকায় মাছের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলেও ২২ আগস্ট পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ এখনো কাভিতের পাঁচটি শহরে ধরা মাছ মানুষের খাওয়ার জন্যে নিরাপদ নয় বলে শ্রেণীবদ্ধ করেছে। এটি ভোক্তাদের খাদ্য সরবরাহকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে মাছ ধরা শিল্পে কর্মরতদের মৌলিক উপার্জন কেঁড়ে নিয়েছে।
বাসিন্দা, মৎস্যজীবী ও পরিবেশবাদী দলগুলি সরকারের “অপর্যাপ্ত” প্রতিক্রিয়াকে আক্রমণ করেছে। জরু্রি পরিস্থিতি বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় গোষ্ঠীকে ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়গুলিতে স্বেচ্ছাসেবা ও সাহায্য বিতরণে প্ররোচিত করেছে।
একটি গণমাধ্যম সাক্ষাৎকারে পামলাকাইয়া মৎস্যজীবী গোষ্ঠী বলেছে মাছের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার সময় ভর্তুকি অপ্রতুল ছিল।
ত্রাণ সহায়তা যথেষ্ট ও নিয়মিত নয়। প্রদেশে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকলে একমাত্র আয়ের উৎস মাছ ধরা হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত জেলেদের সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।
আইনি ফাঁকফোকরের কারণে উপ-চুক্তি করা কোম্পানিগুলির বর্তমানে ডুবে যাওয়া জাহাজগুলি তেল ছড়ানোর জন্যে দায়ী হতে পারে না। সিনেটের শুনানির সময় গ্রিনপিস প্রচারক জেফারসন চুয়া এই আইনের ত্রুটির কথা তুলে ধরে নিম্নলিখিত সুপারিশ করেছেন:
সরকারকে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলিকে জবাবদিহি করার আহ্বান জানাতে হবে। সংস্থাগুলিকে অবশ্যই প্রকাশ্যে আসতে বাধ্য করে তেল ছড়ানোর দায়িত্ব নিয়ে স্বাস্থ্য, বাস্তুতন্ত্র ও জীবিকার চলমান ক্ষতির জন্যে সম্প্রদায় ও স্থানীয় সরকারগুলিকে এবং এই বিপর্যয়ের প্রভাবগুলির জন্যে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
জনগণের জন্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির (এজিএইচএএম) প্রচারকরা ২৫ জুলাই টাইফুন ক্যারিনা সৃষ্ট রুক্ষ সমুদ্র পরিস্থিতি সত্ত্বেও জাহাজগুলিকে যাত্রা করার অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। “এটি প্রতিরোধমূলক দুর্যোগ সতর্কতা বাস্তবায়নে সরকারের আন্তরিকতার অভাব প্রদর্শন করে,” এটি একটি বিবৃতিতে বলেছে।
খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচির ফিলিপাইন নেটওয়ার্ক সরকারের সামগ্রিক প্রতিক্রিয়াকে “পরিস্থিতির তীব্রতা পুরোপুরি মোকাবেলা করতে ব্যর্থ” বলে বর্ণনা করেছে।
তেল ছড়ানোতে সৃষ্ট ব্যাপক পরিবেশগত ও সামাজিক ক্ষতি কার্যকরভাবে সমাধানের জন্যে জাতীয় সরকারের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্তমূলক ও ব্যাপক পদক্ষেপ দরকার। এটি তাৎক্ষণিক প্রতিকার প্রচেষ্টা ছাড়াও পরিবেশ, খাদ্য উৎপাদক ও ভোক্তাদের সুরক্ষার অগ্রাধিকার দাবি করে।
ওশেনার গ্লোরিয়া এস্তেনজো রামোস তেল ছড়িয়ে পড়ার দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাবের বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন:
আমাদের মহাসাগরে বিষাক্ত তেল ছড়িয়ে পড়া আমাদের বনের দাবানলের মতো, ধ্বংসের সেই পথ কয়েক দশক ধরে তার নেতিবাচক প্রভাব বয়ে বেড়ায়। আমরা জানি ছড়িয়ে পড়া তেল সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের জন্যে একটি মৃত্যুফাঁদ এবং মানুষ, বন্যপ্রাণী ও আমাদের পরিবেশের উপর এর নেতিবাচক ফল রয়েছে। জাহাজে থাকা ১০ লক্ষ লিটারের বেশি তেল নিরাপদে অপসারণ করা না গেলে ছড়িয়ে পড়া তেল সামুদ্রিক বন্যপ্রাণীকে মেরে ফেলতে, আমাদের ম্যানগ্রোভকে ধ্বংস করতে এবং মানুষের স্বাস্থ্য, খাদ্যের উৎস ও জীবিকাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে।