মাখা ময়দার তাল
মাখা ময়দার তাল বা সংক্ষেপে ময়দার তাল বলতে শস্যদানার ময়দা (মিহি প্রক্রিয়াজাত গুঁড়া) দিয়ে তৈরি মোটা, পুরু, নমনীয়, কদাচিৎ চটচটে আঠালো ও স্থিতিস্থাপক লেইকে বোঝায়। সাধারণত ময়দার সাথে সামান্য পরিমাণ পানি (জল) এবং প্রয়োজনে অন্য কোনও তরল (যেমন দুধ) হাত, উপকরণ বা যন্ত্রের সাহায্যে ফেটিয়ে, মাখিয়ে, মিশিয়ে, ঠেসে, চেপে, পিষে মাখা ময়দার তাল প্রস্তুত করা হয়। কখনও কখনও এর মধ্যে গাঁজনের জন্য ইস্ট (এক ধরনের ছত্রাকের গুঁড়া/মিশ্রণ) অথবা অন্য কোনও ধরনের খামির ব্যবহার করা হয়, যাতে তালটি কিছু সময় রেখে দিলে এর ভেতরের খামির থেকে বায়বীয় পদার্থ বের হয়ে সেটি ফুলে ওঠে। এছাড়া এতে বিভিন্ন ধরনের স্নেহ পদার্থ (তেল, ঘি, ময়ান), স্বাদগন্ধবর্ধক উপাদান, লবণ, চিনি, মধু, ডিম, ইত্যাদি যোগ করা হতে পারে। পানি বেশি থাকলে ময়দার তাল বেশি স্থিতিস্থাপক হয়, আর ময়ান বা স্নেহ পদার্থ বেশি থাকলে বেশি খাস্তা ও রান্নার পরে বেশি মচমচে হয়। ব্যবহৃত উপাদান, খামির, মেশানোর পদ্ধতি (দ্রুত নাকি বহুক্ষণ ঠেসে ও ফুলিয়ে), এবং রান্না বা সেঁকার পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে মাখা ময়দার তাল বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে।
বহু বিভিন্ন প্রকারের খাবার প্রস্তুত করার জন্য মাখা ময়দার তাল বানানো ও সেটিকে বিশেষ আকার প্রদান করার দরকার হয়। বিশেষ করে রুটি, পাঁউরুটি, বা রুটি-ভিত্তিক পদ রান্নার জন্য এটি আবশ্যক। এছাড়া নানরুটি, বিস্কুট, কেক বা পিঠা, কুকি (মিষ্টি কেক-সদৃশ বিস্কুট), ডুমো, পুরি, ফুলুরি, নুড্ল, পাস্তা, পেস্ট্রি (ময়দার লেচির বিভিন্ন পদ), পিৎজা (ময়দার গোলাকৃতি চ্যাপ্টা পাতলা সেঁকা লেচি), পকৌড়া বা বড়ার (পাইয়ের) শক্ত আবরণ এবং এই জাতীয় পদ তৈরিতেও মাখা ময়দার তাল ব্যবহার করা হয়। মাখা ময়দার তাল বিভিন্ন ধরনের শস্যদানার ময়দা থেকে প্রস্তুত করা হতে পারে, তবে বেশিরভাগ সময়েই গমের ময়দা বা আটা ব্যবহার করা হয়। এছাড়া ভুট্টা, চাল, রাই, শুঁটি, কাঠবাদাম এবং বিশ্ব জুড়ে ব্যবহৃত আরও অন্যান্য খাদ্যশস্য ও ফসলের দানা থেকে প্রাপ্ত ময়দাও ব্যবহৃত হতে পারে।