বিষয়বস্তুতে চলুন

বাজী রাও

উইকিসংকলন থেকে

বাজী রাও

“ইস্ মুল্কমে এক বাজী, ঔর সব্ পাজী”।

নিজাম-উল্-মুল্ক।

শ্রীসখারাম গণেশ দেউস্কর প্রণীত।

কলিকাতা।

১৩০৮ সাল।

মূল্য বার আনা।

কলিকাতা
২৫/১ নং স্কটস লেনে, ভারত মিহির যন্ত্রে সান্যাল এণ্ড কোম্পানির দ্বারা
মুদ্রিত।

বিজ্ঞাপন

 মহাবীর বাজী রাওয়ের কর্ম্ম-বহুল জীবনের অতি সংক্ষিপ্ত পরিচয় এই ক্ষুদ্র পুস্তকে লিপিবদ্ধ হইল। তাঁহার সম্পূর্ণ জীবনচরিত যথাযথভাবে বর্ণনা করিতে গেলে এক খানি প্রকাণ্ড গ্রন্থ হইয়া পড়ে। কিন্তু তদুপযোগী উপকরণ সুলভ নহে। বাজী রাওয়ের স্বহস্ত-লিখিত অনেক চিঠিপত্র অধুনা আবিষ্কৃত হইয়াছে বটে; কিন্তু তাঁহার সংক্রান্ত অনেক জ্ঞাতব্য বিষয়ে আমরা এখনও সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ। এরূপ অবস্থায় তাঁহার সর্ব্বাঙ্গসুন্দর ও বৃহদায়তন জীবনচরিত রচনার প্রয়াস বিড়ম্বনামাত্র। এই কারণে আমি সে অধ্যবসায় পরিত্যাগ করিয়াছি। বাজী রাওয়ের ন্যায় মহদ্‌ব্যক্তির সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্তও আমাদিগের পক্ষে অল্প শিক্ষাপ্রদ নহে—এই বিশ্বাসের বশবর্ত্তী হইয়া বর্ত্তমান পুস্তকখানি রচনা করিলাম।

 “বিশ্বকোষ” নামক বৃহদভিধানের জন্য পেশওয়েদিগের ইতিহাস লিখিবার ভার আমার প্রতি অর্পিত হইয়াছিল। তদনুরোধে আমি বালাজী বিশ্বনাথ, বাজী রাও ও বালাজী বাজী রাও প্রভৃতির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস রচনা-পূর্ব্বক উক্ত অভিধানে সন্নিবেশিত করি। তাহা পাঠ করিয়া আমার কয়েক জন বন্ধু আমাকে বাজী রাওয়ের বিবরণ স্বতন্ত্র পুস্তকাকারে প্রকাশ করিতে অনুরোধ করেন। তাঁহাদিগের উৎসাহেই এই ক্ষুদ্র পুস্তকের উৎপত্তি হইয়াছে।

 বাজী রাওয়ের এই পুনঃ প্রচার-কালে উহার পূর্ব্বলিখিত অংশগুলি আমূল সংশোধিত ও পরিবর্ত্তিত হইয়াছে। কোনও কোনও স্থলে নূতন অনুসন্ধানের ফলে পূর্ব্বসিদ্ধান্তের সম্পূর্ণ পরিহার করিতে বাধ্য হইয়াছি। তৎসঙ্গে অনেক নুতন ঘটনার বিবরণও ইহাতে সন্নিবেশিত করিয়াছি। তাহাতে ইহা পূর্ব্বায়তনের দ্বিগুণের অপেক্ষাও বৃহত্তর হইয়াছে।

 ক্যাপ্টেন গ্রাণ্ট ডফ্ সাহেব মহোদয়ের রচিত ইতিহাসগ্রন্থের সহিত বহু স্থলে এই পুস্তকের বর্ণনার পার্থক্য লক্ষিত হইবে। নবাবিষ্কৃত মূল চিঠি পত্রের ও দেশীয় প্রাচীন ইতিহাস-গ্রন্থের অনুসরণ করায় এইরূপ ঘটিয়াছে। এই ক্ষুদ্রপুস্তকে ইংরাজ ইতিহাস-লেখকদিগের মত-খণ্ডনে প্রয়াস নিরর্থকবোধে পরিত্যাগ করিয়াছি। সংক্ষিপ্ত জীবন-চরিতে, বিচারবিতর্কের অবতারণা যুক্তিসঙ্গত বলিয়া আমার মনে হয় নাই।

 মহারাষ্ট্র উচ্চারণের বিশুদ্ধিরক্ষা যে সকল স্থলে আবশ্যক বলিয়া বোধ হইয়াছে,সে সকল স্থলে অন্তস্থ বকারের প্রকৃত উচ্চারণ সূচিত করিবার জন্য “ৰ”-কারের যোজনা করিয়াছি। মোসলমানদিগের “খ” উপাধি এই পুস্তকে “খান”-রূপে লিখিত হইয়াছে। বাজী রাওয়ের পত্রাদিতে খাঁ-র পরিবর্তে “খান” শব্দই সর্ব্বত্র ব্যবহৃত হইয়াছে, দৃষ্ট হয়। ছত্রপতি মহাত্মা শিবাজীর পত্রেও উক্ত প্রয়োগ দেখিয়াছি। এই কারণে এই পুস্তকে “খান” লিখিবার প্রবৃত্তি নিরুদ্ধ করিতে পারি নাই। তবে অসাবধানতা ও পূর্ব্বসংস্কারবশে দুই এক স্থলে “খাঁ” শব্দ মুদ্রিত হইয়া গিয়াছে। অন্যবিধ মুদ্রণবিভ্রাটও যে না ঘটিয়াছে, তাহা নহে। আশা করি, সুধী পাঠক সে ত্রুটী মার্জ্জনা করিবেন।

 উপসংহারে রাও বাহাদুর কাশীনাথ নারায়ণ সানে বি, এ, (ডেক্ক্যান কলেজ), শ্রীযুক্ত বিশ্বনাথ কাশীনাথ রাজওয়াড়ে ও সুহৃদ্বর শ্রীযুক্ত দত্তাত্রয় বলবন্ত পারসনীস মহোদয়ের নিকট আমার একান্ত কৃতজ্ঞতা প্রকাশ প্রয়োজন। ইঁহাদিগের অক্লান্ত চেষ্টায় মহারাষ্ট্র দেশের ইতিহাস সংক্রান্ত দুর্লভ প্রাচীন কাগজ পত্র সংগৃহীত না হইলে এই পুস্তক রচনা করা আমার পক্ষে দুঃসাধ্য হইত। যে সকল বঙ্গীয় বন্ধুর সহায়তায় ও উৎসাহে এই পুস্তক বর্ত্তমান আকারে প্রকাশিত হইল, তাঁহাদিগের ধন্যবাদ করিয়া এই সংক্ষিপ্ত বিজ্ঞাপন শেষ করিলাম।

১লা মাঘ,
১৩০৮ সাল।
শ্রীসখারাম গণেশ দেউস্কর

এই লেখাটি ১ জানুয়ারি ১৯২৯ সালের পূর্বে প্রকাশিত এবং বিশ্বব্যাপী পাবলিক ডোমেইনের অন্তর্ভুক্ত, কারণ উক্ত লেখকের মৃত্যুর পর কমপক্ষে ১০০ বছর অতিবাহিত হয়েছে অথবা লেখাটি ১০০ বছর আগে প্রকাশিত হয়েছে ।