বোয়াল
বোয়াল Wallago attu | |
---|---|
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | Animalia |
পর্ব: | কর্ডাটা |
শ্রেণীবিহীন: | Fish |
শ্রেণীবিহীন: | Teleostomi |
উপশ্রেণী: | Actinopterygii |
বর্গ: | Siluriformes |
পরিবার: | Siluridae |
গণ: | Wallago |
প্রজাতি: | W. attu |
দ্বিপদী নাম | |
Wallago attu Bloch & Schneider, 1801 |
বোয়াল (বৈজ্ঞানিক নাম: Wallago attu) (ইংরেজি: helicopter catfish) হচ্ছে সিলুরিডে গোত্রের অন্তর্গত একটি ক্যাটফিশ। মালয়েশিয়ায় একে ইকান তাপাহ নামে ডাকা হয়, যা কিনা মালয়েশিয়ার তাপাহ শহরের নাম থেকে এসেছে।
বর্ণনা
[সম্পাদনা]এই প্রজাতির মাছের দেহ লম্বা ও পাশে চ্যাপ্টা। দেহ আঁশহীন। মাথা চ্যাপ্টা এবং দুটি লম্বা ও দুটি খাটো স্পর্শী আছে। এদের দৈর্ঘ্য ২০০ সেন্টিমিটার এবং ওজন ৪৫ কেজিরও বেশি হতে পারে।[২]
বিস্তারিত ও অধুনিক চাষ
[সম্পাদনা]বোয়াল মাছ বড় নদী, হ্রদ, পুকুরে পাওয়া যায়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে (বাংলাদেশ থেকে ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়া, এমনকি আফগানিস্তানেও) বোয়ালের দেখা মেলে।
প্রাকৃতিক অভয়াশ্রম নষ্ট হওয়ায় মাছটি আগের মত পাওয়া যায় না। তবে বোয়াল একটি রাক্ষুসে স্বভাবের মাছ। কাজেই এ মাছকে প্রজননের আওতায় এনে উৎপাদন করতে কয়েকটি বিশেষ দিকে খেয়াল রাখতে হয়।
বোয়াল মাছ মধ্য এপ্রিল থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত ডিম দেয়। প্রজননের সময় খুব সহজেই পুরুষ ও স্ত্রী মাছকে শনাক্ত করা যায়। প্রজনন মৌসুমে স্ত্রী মাছের পেটভর্তি ডিম থাকে আর পুরুষ মাছের পেট সাধারণ মাছের মত থাকে। তাছাড়া পুরুষ মাছের পেটে চাপ দিলে সাদা মিল্ট বের হয়। এভাবেই বোয়ালের পুরুষ-স্ত্রী শনাক্ত করা যায়।
বোয়াল মাছকে পিজি হরমোন দিয়ে ইঞ্জেকশন করলেই ডিম দিয়ে থাকে। প্রথম ডোজের সময় শুধু স্ত্রী মাছকে ইঞ্জেকশন দিতে হয়। ডোজের মাত্রা ২ মিগ্রা বা কেজি। ৬ ঘণ্টা পর দ্বিতীয় ডোজ দিতে হয় ৪ মিগ্রা বা কেজি।
দুটি পদ্ধতিতে বোয়ালের ডিম সংগ্রহ করা যায়। বোয়াল মাছকে পিজি হরমোন ইঞ্জেকশন দেওয়ার পর পুরুষ ও স্ত্রী মাছকে আলাদা আলাদা হাউসে রাখতে হয়। দ্বিতীয় ডোজের ৬ ঘণ্টা পর সাধারণত বোয়াল মাছ ডিম দিয়ে থাকে। খেয়াল রাখতে হবে, যখনই ২-১টি ডিম বের হবে; তখনই মাছগুলোকে একে একে হাউস থেকে তুলে আনতে হবে।
এবার স্ত্রী মাছের পেটে আস্তে করে চাপ দিলেই ডিম বের হবে। স্ত্রী মাছের ডিম বের করার পর তাৎক্ষণিকভাবে পুরুষ মাছের পেটে চাপ দিয়ে মিল্ট বের করে ডিমের উপর পাখির পালক দিয়ে ভালোভাবে মেশাতে হবে।
এরপর ডিমগুলোকে ২-৩ বার বিশুদ্ধ পানিতে পরিষ্কার করে ৩-৪ ইঞ্চি উচ্চতার পানির হাউসে রাখতে হবে। চিকন প্লাস্টিক পাইপকে ছিদ্র করে ঝর্ণার ব্যবস্থা করতে হবে। এভাবে ২০-২২ ঘণ্টার মধ্যেই ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বের হবে।
অন্যভাবে, পুরুষ ও স্ত্রী মাছকে হরমোন ইঞ্জেকশন দিয়ে একসাথে একটি বড় হাউসে ছেড়ে দিতে হবে। তাতে দ্বিতীয় ডোজের ৬ ঘণ্টার মধ্যেই প্রাকৃতিকভাবে এরা ডিম পারবে। ডিম পারা শেষ হলে ব্রুডমাছগুলোকে সর্তকতার সাথে সরিয়ে নিতে হবে। তারপর হাউসের পানি কমিয়ে ৩-৪ ইঞ্চি রেখে ছিদ্রযুক্ত পাইপ দিয়ে পানির ঝরনা দিতে হবে। এখানেও ২০-২২ ঘণ্টার মধ্যে ডিম থেকে বাচ্চা বের হবে।
তবে বোয়াল মাছের পোনা খুবই রাক্ষুসে। ডিম থেকে ফোটার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই একটি আরেকটিকে খেতে শুরু করে। অন্য মাছের রেণু পোনা ডিমের কুসুম বা ক্ষুদ্র আকৃতির প্ল্যাংকটন খেলেও বোয়ালের পোনা ডিমের কুসুম বা কোনো ধরনের প্ল্যাংকটন খায় না। সে ক্ষেত্রে তাদের জীবিত অবস্থায় মাছের রেণু বা পোনাকে খেতে দিতে হয়। এভাবে ৮-১০ দিনেই ২ ইঞ্চি সাইজের পোনায় পরিণত হয়।
বোয়াল মাছ এককভাবে চাষ করা যায় না। একটি আরেকটিকে খেতে খেতে শেষ পর্যন্ত আর বাকি থাকে না। তা ছাড়া কৃত্রিম খাবার না খাওয়ায় মাছগুলো খুব একটা বড়ও হয় না। তাই এদের বিভিন্ন মাছের সাথে চাষ করে ভালো ফল পাওয়া যায়। মজুদ ঘনত্ব মিশ্রচাষে প্রতি ৫ শতাংশে ১টি মাছ।[৩]
বাংলাদেশে বর্তমান অবস্থা এবং সংরক্ষণ
[সম্পাদনা]আইইউসিএন বাংলাদেশ (২০০০) এর লাল তালিকা অনুযায়ী এই প্রজাতিটি বাংলাদেশে এখনো হুমকির সম্মুখীন নয়।[২]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Ng, H.H. (২০১০)। "Wallago attu"। বিপদগ্রস্ত প্রজাতির আইইউসিএন লাল তালিকা। সংস্করণ 2012.2। প্রকৃতি সংরক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক ইউনিয়ন। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০১৩।
- ↑ ক খ মহসিন, এ বি এম (অক্টোবর ২০০৯)। "স্বাদুপানির মাছ"। আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; আবু তৈয়ব, আবু আহমদ; হুমায়ুন কবির, সৈয়দ মোহাম্মদ; আহমাদ, মোনাওয়ার। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ২৩ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ১৫৯–১৬০। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
|আইএসবিএন=
এর মান পরীক্ষা করুন: invalid prefix (সাহায্য)। - ↑ "আধুনিক উপায়ে যেভাবে বোয়াল মাছ চাষ করবেন"। ২৬ মে ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ২৬ মে ২০২৩।