ঠকুরি
ঠকুরি ( নেপালি: ठकुरी ) বা ঠাকুরি রা হল নেপালের একটি রাজকীয় উপজাতি। এই সম্প্রদায় ঐতিহাসিক শাসক শ্রেণী যেমন বাইসি এবং চৌবিসি রাজত্বের গ্রেট খাসা মাল্লা শাসকদের বংশধরদের নিয়ে গঠিত। নেপালের প্রাক্তন রাজপরিবারও এই উপজাতির অন্তর্ভুক্ত।
ব্যুৎপত্তি
[সম্পাদনা]নেপালি সমাজবিজ্ঞানী হরকা বাহাদুর গুরুং উল্লেখ করেছেন যে ঠাকুরি হল হিন্দি শব্দ ঠাকুরের নেপালি সংস্করণ যার অর্থ 'সম্পত্তির মালিক'। [১] নেপালের ঠাকুররাও বাইসি এবং চৌবিসি রাজত্বের সময় থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে কিছু অঞ্চলের মালিকানা পেয়েছিলেন এবং ঠাকুরাই শব্দটির মাধ্যমে আসলে প্রাপ্ত জায়গীর বা জমিদারীকে বোঝানো হয়। [১]
উৎপত্তি
[সম্পাদনা]ঠকুরীরা ঐতিহ্যগতভাবে শাসক ও যোদ্ধা শ্রেণী হতে উদ্ভুত। তারা দাবি করে যে তারা প্রাচীন রাজকীয় বংশোদ্ভূত। [২] ঠাকুররা একটি উচ্চ-সামাজিক-রাজনৈতিক গোষ্ঠী যা খাস, মাগার এবং সম্ভবত ভারতীয় রাজপুত অভিবাসীদের আন্তঃবিবাহের মাধ্যম থেকে উদ্ভূত বলে মনে করা হয়। [২] ১৮৫৪ সালের মুলুকি আইন (আইনি সংহিতা) অনুসারে রাজপুত শব্দ দ্বারা ঠাকুরদের বোঝায়। [৩] অনেক ইতিহাসবিদ দাবি করেছেন যে রাজপুত বংশোদ্ভূত হওয়ার তত্ত্বটি নেপালের বিভিন্ন শাসক পরিবার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছিল। [৪] স্কটিশ সমসাময়িক ইতিহাসবিদ ফ্রান্সিস বুকানন-হ্যামিল্টনের মতে, গোর্খা রাজ্যের ঠাকুরী শাহ রাজবংশ [২] এবং নেপাল রাজবংশ দাবি করে যে তারা চিত্তোর রাজপুতদের বংশোদ্ভূত। কিন্তু আসলে তারা মাগার উপজাতির বংশধর। [৫] ঐতিহাসিক হ্যামিল্টন আরও বলেছেন যে চিত্তোর রাজপুতদের বংশধর হওয়ার তাদের দাবী আসলে একটি নিছক কল্পকাহিনী।[৫] ইতিহাসবিদ মহেশ চন্দ্র রেগমি দাবি করেছেন যে "নেপালের প্রতিটি শাসক রাজবংশ ভারতের সুপরিচিত রাজবংশের সাথে তাদের বংশের সংযোগ স্থাপনের চেষ্টা করেছে।" [৬] গোর্খার ঠাকুরী শাহ শাসকদের একজন, [২] রাজা রাম শাহ উদয়পুরের রানাদের সংগে তার আত্মীয়তার সম্পর্ককে স্বীকৃতি দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। [৬]
সমাজ
[সম্পাদনা]ঠাকুরিরা আভিজাত্য, উচ্চ সামাজিক আচার ও রাজনৈতিক মর্যাদার অধিকারী। [২] ঠাকুরিরা রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে অন্যান্যদের তুলনায় অগ্রসর শ্রেনী হিসাবে পরিচিত ছিল। [২] ঐতিহ্যগতভাবে, ঠাকুরদের প্রধান পেশা ছিল সরকারী কাজ দেখাশোনা, কৃষিকাজ এবং সামরিক বাহিনীতে সৈন্য হিসাবে যোগদান। [২] ঠাকুর ঐতিহ্যগতভাবে শাসক ও যোদ্ধা শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। [২] রাজধানী শহরের কিছু অভিজাত পরিবার ছাড়া অধিকাংশ ঠাকুরই পশ্চিম নেপালের কৃষিজীবী। [২] ব্রাহ্মণ পিতা এবং ঠকুরি মায়ের থেকে জন্ম নেওয়া সন্তানদের "হামাল" নামে একটি নতুন বর্ণে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়। [২]
ঠাকুর পরিবার ও রাজবংশ
[সম্পাদনা]গোর্খা রাজ্য শাসণকারী শাহ রাজবংশ এবং পরবর্তীকালের নেপাল রাজ্য ঠাকুরদের রাজবংশের অন্তর্গত। [২]
এছাড়াও দারচুলা ( দেথালা, উকু, নেপাল গ্রাম) অঞ্চলের পাল ঠাকুরিরা এবং নেপালের দোটি জেলার কাতুরি রাজারা ঠাকুরদের রাজবংশের অন্তর্গত। [৭] [৮]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ Gurung 1996।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ ট Dharam Vir 1988।
- ↑ Sharma 2004।
- ↑ Nagendra Kr Singh 1997।
- ↑ ক খ Hamilton 1819।
- ↑ ক খ Mahesh Chandra Regmi 1976।
- ↑ Katyuri kings 1988।
- ↑ Askot 1988।