জলাধার
জলাধার হলো তরল পদার্থ সংরক্ষণের একটি স্থান। এই তরল পদার্থ পানি, হাইড্রোকার্বন বা গ্যাস যেকোন কিছুই হতে পারে। সাধারণ জলাধার বলতে একটি বৃহৎ প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম, পুকুর বা পানি সংরক্ষণ করার জন্য বাঁধ বা পানি সংরক্ষণ লককে বোঝায়। পানির প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করে জলাধার তৈরী করা যেতে পারে। নদী উপত্যকায়ও বাঁধ দিয়ে নির্মাণ করা যেতে পারে। অন্যদিকে, সমতল ভূমি খনন করে বা নদীতীরে বাঁধ দিয়েও জলাধার নির্মাণ করা যায়।
ট্যাঙ্ক জলাধারের ট্যাঙ্কে তরল পদার্থ বা গ্যাস জমা হয় যা মাটি নিচ থেকে উপরে উত্তোলন করা যায় বা নিচে নিয়ে যাওয়া যায়। ভূগর্ভস্থ জলাধারগুলো মাটির নিচে তরল পদার্থ, প্রধানত, পানি বা পেট্রোলিয়াম সংরক্ষণ করার জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
ধরন
[সম্পাদনা]উপত্যকায় বাঁধের জলাধার
[সম্পাদনা]উপত্যকায় বাঁধ দ্বারা নির্মিত জলাধারের অববাহিকা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রাকৃতিক ভূসংস্থানের উপর নির্ভর করে। বাঁধগুলো সাধারণত উপত্যকার সরু অংশের দিকে নির্মিত হয়ে থাকে। উপত্যকার পাশগুলো প্রাকৃতিক দেয়াল হিসেবে কাজ করে, বাঁধটা এমন সরু জায়গায় অবস্থিত থাকে যা নিমার্ণের ক্ষেত্রে অধিকতর শক্তি এবং নিমার্ণ খরচ কম হয়। অনেক জলাধার নির্মাণ প্রকল্পে, আশপাশের এলাকার মানুষগুলোকে স্থানান্তরিত করা হয় এবং নতুন গৃহায়ণের ব্যবস্থা করা হয় এবং ঐতিহাসিক নিদর্শনসমূহ সরিয়ে অন্য পরিবেশে স্থানান্তর করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, আবু সিম্বেল[১] মন্দির (যেটা মিশরের নীলনদ হতে লেক নেসার নিমার্ণ করার জন্য অসওয়ান বাঁধ নির্মাণের পূর্বে সরিয়ে ফেলা হয়।), লিন সেলিন নিমার্ণের সময় কেপিল সেলিন গ্রামের স্থানান্তর[২] এবং লেক সেল্টো নির্মাণের জন্য বোর্গো সান পিয়েত্রো অব পেত্রেল্লা সেল্টোর স্থানান্তরের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে।
উপত্যাকায় জলাধার নির্মাণের জন্য সাধারণত নদীর প্রয়োজন হয়, যা প্রায়ক্ষেত্রে একটি অস্থায়ী টানেল বা বাই-পাস চ্যানেলে মধ্যে দিয়ে যায়। পাহাড়ি অঞ্চলে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিদ্যমান হ্রদকে সম্প্রসারিত করে জলাধার নির্মাণ করা হয়ে থাকে। মিড ওয়েলসের লিন ক্লিইডগের মতো এই ধরনের জলাধারগুলো মাঝে মধ্যে তাদের পানিস্তরের উচ্চতা এক বা ততোধিক ফিডার স্ট্রিমের ওয়াটেরশেড অতিক্রম করে। এইসব ক্ষেত্রে জলাধারে ধারণ করার জন্য পাশে অতিরিক্ত বাঁধ নির্মাণ করতে হয়।
জলাধার নির্মাণের কারণ
[সম্পাদনা]জলাধার নির্মাণের কারণ হলো, নদীর পানির পরিমাণ সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়। খুব বৃষ্টির সময়ে বা পাহাড়ের তুষার গলের দরুন নদীর পানির স্বাভাবিক উচ্চতা বেড়ে যায় এবং কখনও কখনও বন্যায় রূপ নেয়। নদীর মুখে জলাধার নির্মাণ করে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যা অনেক ক্ষেত্রেই বন্যা নিয়ন্ত্রণে সক্ষম। অন্যদিকে, খরা বা শুকনো সময়ে নদীর জলের স্তর কমে যাবার সম্ভাবনা থাকে। এই পরিস্থিতিতে, জলাধার থেকে পানি নিষ্কাশন করা হয় যাতে কৃষকরা তাদের ফসলের পানি দিতে পারে, পাশাপাশি ঘরবাড়ি এবং মাছের খামার গুলো তাদের কাজ স্বাভাবিকভাবে করতে পারে। বিভিন্ন দেশে জলাধার অন্যান্য উদ্দেশ্যেও নির্মাণ করা হয়, যেমন নৌকা বাইচ খেলার স্থান হিসাবে, মাছ চাষের জন্য অথবা বিনোদন পার্ক হিসাবে। কিছু কিছু জলাধার বিদ্যুৎ উৎপাদনেও ব্যবহৃত হয়।
পৃথিবীর বৃহৎ জলাধার
[সম্পাদনা]আয়তনের দিক দিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম জলাধার হচ্ছে ভোল্টা হ্রদ, যা আফ্রিকার ঘানাতে, ভোল্টা নদীতে বাঁধ নির্মাণ করে তৈরি করা হয়। লেক ভোল্টা প্রায় ৮,৫০০ বর্গ কিলোমিটার (৩,২৮০ বর্গ মাইল) জুড়ে অবস্থিত, এটি আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ডেলাওয়্যার রাজ্যের চেয়ে বড় অঞ্চল। পানি ধারনক্ষমতার দিক থেকে ভোল্টা হ্রদ বিশ্বে চতুর্থ স্থানে রয়েছে। ধারনক্ষমতা বিবেচনায় বিশ্বের বৃহত্তম জলাধারও আফ্রিকাতেই। জামিবা এবং জিম্বাবুয়ের সীমান্তে অবস্থিত কারিবা হ্রদ । জামবেজি নদীটিকে বাঁধ দিয়ে তৈরি করা এই হ্রদটি ১৮৫ ঘনকিলোমিটার (৪৪ ঘন মাইল) পানি সঞ্চয় করতে সক্ষম। [৩]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ UNESCO World Heritage Centre। "Nubian Monuments from Abu Simbel to Philae"। সংগ্রহের তারিখ ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫।
- ↑ Capel Celyn, Ten Years of Destruction: 1955–1965, Thomas E., Cyhoeddiadau Barddas & Gwynedd Council, 2007, আইএসবিএন ৯৭৮-১-৯০০৪৩৭-৯২-৯
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৭ মার্চ ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ এপ্রিল ২০২০।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- Department of Water Resources। "Reservoir Information"। California Data Exchange Center। State of California।
- Global Journal of Research Engineering (USA)। "Durability-Based Optimization of Reinforced Concrete Reservoirs Using Artificial Bee Colony Algorithm"। Civil and Structural Engineering (GJRE-E)। ৩ এপ্রিল ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ মার্চ ২০২২।