কোষ ঝিল্লি
উইকিপিডিয়ার ভূমিকাংশ নীতিমালা অনুসারে, এই নিবন্ধের ভূমিকাংশটি পুনরায় পরিষ্কার করে লেখা প্রয়োজন। (ডিসেম্বর ২০১২) |
প্রোটোপ্লাজমের বাইরে তিন স্তরের যে স্থিতিস্থাপক পর্দা থাকে তাকে কোষঝিল্লি বা কোষপর্দা বলে। কার্ল নাগেলি ১৮৫৫ সালে একে প্লাজমামেমব্রেন (Plasma Membrane) নামকরণ করেন। এরপর ১৯৩১ সালে জে. কিউ. প্লাওয়ার প্লাজমালেমা (Plasmalemma) নামটি ব্যবহার করেন। প্রাণীকোষে কোষঝিল্লি সবচেয়ে বাইরের স্তর কিন্তু উদ্ভিদকোষে এটি কোষ প্রাচীর ও সাইটোপ্লাজমের মাঝে অবস্থান করে। তিনটি স্তর দিয়ে গঠিত । বিভিন্ন প্রকার কোষে যত প্রকার ঝিল্লি থাকে তাদের সকলেরই মৌলিক গঠন ত্রিস্তর বিশিষ্ট একক ঝিল্লি, বিজ্ঞানী রবার্টসনের ভাষায় ইউনিট মেমব্রেন (Unit Membrane)।
গঠন
[সম্পাদনা]বর্তমানে কোষ ঝিল্লির গঠন ব্যাখ্যা করার জন্য সর্বোত্তম মতবাদ হল ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়-এর বিজ্ঞানী সিঙ্গার ও নিকোলসন কর্তৃক প্রদত্ত তরল মোজাইক মতবাদ বা ফ্লুইড মোজাইক মডেল।[১] তাদের কথায় "প্রোটিনের শৈলশিরা লিপিডের মহাসমুদ্রে ভাসমান।"
ত্রিস্তরী কোষ ঝিল্লিতে মাঝের পাতলা স্তরে লিপিড থাকে এবং দুই পাশে প্রোটিনে পুরু স্তর থাকে। লিপিড স্তর 35Å পুরু। এবং দুই পাশের প্রোটিন স্তর 20Å পুরু। পুরো প্লাজমা ঝিল্লির বেধ 75Å (20+35+20=75)। প্লাজমা ঝিল্লিতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র 8-50Å ব্যাস বিশিষ্ট ছিদ্র থাকে। কোষ ঝিল্লিতে বেশি জল থাকে না। এতে লিপিডের পরিমাণ ৪০%, প্রোটিন ৫৫%[২] ও শর্করা ৫% মতো থাকে। এখানে কোলেস্টেরল, ফসফোলিপিড, গ্লাইকোলিপিড ও গ্লাইকোপ্রোটিন-এর আধিক্য লক্ষ্য করা যায়।
লিপিড স্তর
[সম্পাদনা]লিপিড স্তরকে দুটি উপস্তরে ভাগ করা যায়, যাতে জলাকর্ষী বা হাইড্রোফিলিক প্রান্ত বাইরের দিকে ও জলবিকর্ষী বা হাইড্রোফোবিক প্রান্ত ভিতরের দিকে থাকে। ফসফোলিপিডের ফ্যাটি অ্যাসিডের দুটি চেন হাইড্রোফোবিক প্রান্তে অবস্থান করে। স্তরের মাঝে মাঝে কোলেস্টেরল অণু উপস্থিত থাকে।
লিপিড স্তরে লিপিড অণুর ফ্লিপ-ফ্লপ চলন দেখা যায়, যাতে ফ্লিপেজ নামক একটি উৎসেচক সাহায্য করে। এছাড়া লিপিড অণু নিজ অক্ষের চারপাশে ঘুরতে পারে ও নিজের স্থান পরিবর্তন করতে পারে। এছাড়া ফ্লেকশন নামের একপ্রকার চলন দেখা যায়, যাতে ফ্যাটি অ্যাসিডের চেনগুলি আকর্ষণ বলের প্রভাবে চালিত হয়।
প্রোটিন স্তর
[সম্পাদনা]প্রোটিন স্তরে তিন রকমের প্রোটিন দেখা যায়:[৩]
ধরণ | বর্ণনা | উদাহরণ |
---|---|---|
অন্তর্বর্তী প্রোটিন বা ট্রান্সমেমব্রেন প্রোটিন |
ঝিল্লিটি বড় করলে দেখা যাবে একটি হাইড্রোফিলিক সাইটোসোলিক ডোমেন আছে, যা অভ্যন্তরীণ অণুর সাথে সংযোগ বজায় রাখে, একটি হাইড্রোফোবিক মেমব্রেন-স্প্যানিং ডোমেন যা এটিকে কোষের ঝিল্লির মধ্যে সংযুক্ত করে এবং একটি হাইড্রোফিলিক এক্সট্রা-সেলুলার ডোমেন যা বাহ্যিক অণুর সাথে যোগাযোগ করে। হাইড্রোফোবিক ডোমেন এক বা একাধিক α-হেলিক্স ও β শিট প্রোটিন গঠনের মিলনে গঠিত। | আয়ন চ্যানেল, প্রোটন পাম্প, জি প্রোটিন-কাপলড সংগ্রাহক |
লিপিড অ্যাঙ্করড্ প্রোটিন | সমযোজীভাবে একক বা একাধিক লিপিড অণুর সাথে আবদ্ধ; হাইড্রোফোবিকভাবে কোষের ঝিল্লিতে ঢুকে প্রোটিনকে নোঙর করে। প্রোটিন নিজেই ঝিল্লির সাথে যোগাযোগ করে না। | জি প্রোটিন |
বহিঃস্থ প্রোটিন | অবিচ্ছেদ্য ঝিল্লি প্রোটিনের সাথে সংযুক্ত, বা লিপিড দ্বিস্তরেল বহিঃ অঞ্চলের সাথে যুক্ত। এই প্রোটিনগুলি জৈবিক ঝিল্লির সাথে শুধুমাত্র অস্থায়ী মিথস্ক্রিয়া করে এবং একবার প্রতিক্রিয়া করলে, অণুটি সাইটোপ্লাজমে তার কাজ চালিয়ে যেতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। | কিছু উৎসেচক, কিছু হরমোন |
বিবিধ সংস্করণ
[সম্পাদনা]- অ্যাক্সোলেমা[৪][৫]: স্নায়ুকোষের কোষ ঝিল্লি
- সারকোলেমা[৬]: পেশিকোষের কোষ ঝিল্লি
- ঊলেমা[৭]: ঊসাইট কোষের কোষ ঝিল্লি (অপরিণত ডিম্বকোষ)
কাজ
[সম্পাদনা]- কোষের জীবিত পদার্থকে বাইরের পরিবেশ থেকে রক্ষা করে।
- কোষকে নির্দিষ্ট আকৃতি প্রদান করে।
- কোষের জন্য অভিস্রবণ পর্দা হিসেবে কাজ করে।
- কোষে কোনো বস্তুর বহির্গমন এবং অন্তর্গমন নিয়ন্ত্রণ করে। (পিনোসাইটোসিস, ফ্যাগোসাইটোসিস)
- ব্যাপন এবং অভিস্রবণ পদ্ধতিতে সাহায্য করে।
- বিভিন্ন কোষ অঙ্গাণু এবং নিউক্লিয় পর্দা উৎপাদনে সাহায্য করে।
- হরমোন সংগ্রাহক হিসেবে কাজ করে।
- স্নায়ু কোষ এবং পেশি কোষে উদ্দীপনা পরিবহনে সাহায্য করে।
- কোষের অ্যান্টিজেন ধর্মের পরিচয় বহন করে।
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Singer SJ, Nicolson GL (ফেব্রুয়ারি ১৯৭২)। "The fluid mosaic model of the structure of cell membranes"। Science। 175 (4023): 720–31। এসটুসিআইডি 83851531। ডিওআই:10.1126/science.175.4023.720। পিএমআইডি 4333397। বিবকোড:1972Sci...175..720S।
- ↑ Jesse Gray; Shana Groeschler; Tony Le; Zara Gonzalez (২০০২)। "Membrane Structure"। Davidson College। ২০০৭-০১-০৮ তারিখে মূল (SWF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০১-১১।
- ↑ Alberts B, Johnson A, Lewis J, ও অন্যান্য (২০০২)। Molecular Biology of the Cell (4th সংস্করণ)। New York: Garland Science। আইএসবিএন 978-0-8153-3218-3। ২০১৭-১২-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ Raine, Cedric S. (১৯৯৯)। "Characteristics of the Neuron"। Basic Neurochemistry: Molecular, Cellular and Medical Aspects (ইংরেজি ভাষায়) (6th সংস্করণ)। অজানা প্যারামিটার
|name-list-style=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) - ↑ Fitzpatrick MO, Maxwell WL, Graham DI (মার্চ ১৯৯৮)। "The role of the axolemma in the initiation of traumatically induced axonal injury"। Journal of Neurology, Neurosurgery, and Psychiatry। 64 (3): 285–7। ডিওআই:10.1136/jnnp.64.3.285। পিএমআইডি 9527135। পিএমসি 2169978 ।
- ↑ Campbell KP, Stull JT (এপ্রিল ২০০৩)। "Skeletal muscle basement membrane-sarcolemma-cytoskeleton interaction minireview series"। The Journal of Biological Chemistry। 278 (15): 12599–600। ডিওআই:10.1074/jbc.r300005200 । পিএমআইডি 12556456।
- ↑ Wessel GM, Wong JL (অক্টোবর ২০০৯)। "Cell surface changes in the egg at fertilization"। Molecular Reproduction and Development। 76 (10): 942–53। ডিওআই:10.1002/mrd.21090। পিএমআইডি 19658159। পিএমসি 2842880 ।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- Lipids, Membranes and Vesicle Trafficking - The Virtual Library of Biochemistry and Cell Biology
- Cell membrane protein extraction protocol
- Membrane homeostasis, tension regulation, mechanosensitive membrane exchange and membrane traffic
- 3D structures of proteins associated with plasma membrane of eukaryotic cells
- Lipid composition and proteins of some eukariotic membranes
- [১]