রকেট
রকেট (ইংরেজি: Rocket) একটি বিশেষ ধরনের প্রচলন কৌশল। এটি এমন এক ধরনের যান যেখানে রাসায়নিক শক্তির দহনের মাধ্যমে সৃষ্ট উৎপাদকগুলিকে প্রবল বেগে যানের নির্গমন পথে বের করে দেয়া হয় এবং এর ফলে উৎপন্ন ঘাতবলের কারণে রকেট বিপরীত দিকে প্রবল বেগে অগ্রসর হয়। এক্ষেত্রে নিউটনের গতির তৃতীয় সূত্র অনুসৃত হয়। এই সূত্রটিকে রকেট ইঞ্জিনের মূলনীতি হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। রকেট নির্গমক পদার্থের প্রতিক্রিয়ার সাহায্যে কাজ করে। তাই এটি মহাশুন্যেও কাজ করতে পারে।
প্রকৃতপক্ষে মহাশুন্যে রকেটের কর্মদক্ষতা বায়ুমন্ডলের তুলনায় বেশি। বহুধাপবিশিষ্ট রকেটগুলো পৃথিবীর মুক্তিবেগ অর্জনের মাধ্যমে যেকোনো উচ্চতায় যেতে পারে। এয়ারব্রিথিং ইন্জিনের তুলনায় রকেট ইন্জিনগুলো হালকা, শক্তিশালী এবং বেশি ত্বরন সৃষ্টি করতে পারে। উড্ডয়ন পরিচালনার জন্য রকেট ভরবেগ, এয়ারফয়েল,সহকারি প্রতিক্রিয়া ইন্জিন, গিমবল্ড থ্রাস্ট,ভরবেগ চাকা, নিষ্কাশন স্রোতের বিচ্যুতি, ঘুর্ণন এবং অভিকর্ষের উপর নির্ভর করে।
সামরিক ও বিনোদনের কাজে রকেটের ব্যবহার তের শতকে চীনে দেখা যায়। তবে গুরুত্যপূর্ন বৈজ্ঞানিক, আন্তগ্রহের, শিল্পের কাজে রকেটের ব্যবহার হয়েছে বিংশ শতাব্দীতে এসে । তখন রকেটের কারণে নভশ্চরন থেকে শুরু করে চাঁদে প্রথম পা রাখা সবই সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে আতশবাজি, ক্ষেপণাস্ত্র আরও অস্ত্র, ইজেকশন সিট, কৃত্রিম উপগ্রহের উৎক্ষেপক যান, মানবজাতির মহাকাশ যাত্রা এবং মহাকাশ অনুসন্ধানের কাজে রকেট ব্যবহৃত হচ্ছে।
রকেটের জালানি হিসেবে রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার বেশি প্রচলিত। এক্ষেত্রে অক্সিডাইজার দ্বারা জালানির দহনের মাধ্যমে উচ্চগতি নির্গমক সৃষ্টি হয়।
বিশ্বে অনেক ধরনের রকেট উদ্ভাবিত হয়েছে। এটি ছোট্ট বোতল আকৃতি থেকে শুরু করে বৃহৎ আকৃতির মহাকাশযানের মতো হতে পারে। তন্মধ্যে এরিয়েন ৫ হচ্ছে অন্যতম বৃহৎ আকৃতির রকেট যা দিয়ে কক্ষপথে কৃত্রিম উপগ্রহ প্রেরণ করা হয়।
জার্মান বিজ্ঞানী বার্নার ফন ব্রাউন সর্বপ্রথম তরল-জ্বালানি ব্যবহার উপযোগী রকেট আবিষ্কার করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালে জার্মানির পক্ষে কাজ করেন; কিন্তু পরবর্তীকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তরিত হন। সেখানেই তিনি আমেরিকার মহাকাশ প্রকল্পে কাজ করেন ও চাঁদে নভোচারী প্রেরণে সহায়তা করেন। তাকে রকেট বিজ্ঞানের জনক নামে অভিহিত করা হয়।
বর্তমান এ আরো অনেক আধুনিক রকেট আবিষ্কার করা হয়েছে মানুষের কল্যাণের জন্য ব্যবহার করা হয়। যেমন:ফ্যালকন নাইন।
যন্ত্রাংশ
[সম্পাদনা]রকেট ইঞ্জিনে যে জিনিসগুলো থাকে তার মধ্যে রয়েছে: পেলোড, বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি, মহাশূন্যচারী, নিয়ন্ত্রণ ও দিক নির্ধারণ ব্যবস্থা। এছাড়াও, পেলোড-২, ফার্স্ট স্টেজ, সেকেন্ড স্টেজ, বুস্টার, নজেল, প্রধান ইঞ্জিনmzmঅন্যতম।
রকেট ইঞ্জিন
[সম্পাদনা]রকেট ইঞ্জিন গতানুগতিক ব্যবহারসিদ্ধ ইঞ্জিনের মতো নয়। সাধারণ ইঞ্জিন জ্বালানিগুলোকে উত্তপ্ত করে যা পরে কিছু পিস্টনকে ধাক্কা দেয় এবং পরবর্তিতে তা ঢিলে হয়ে যায়। কাজেই কোনো গাড়ি বা চাকাযুক্ত যানের চাকা ঘুরানোর জন্যে ইঞ্জিন পর্যাবৃত্ত শক্তি ব্যবহার করে। বৈদ্যুতিক মোটরগুলোতেও এই পর্যাবৃত্ত শক্তি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু একটি রকেট ইঞ্জিন চলার জন্যে কখনো পর্যাবৃত্ত শক্তি ব্যবহার করেনা। রকেটের ইঞ্জিনগুলো হলো রি-একশন ইঞ্জিন। রকেটের নীতি এরকমঃ যে জ্বালানিটুকু রকেটের মধ্যে থাকে সেটুকু একটি রাসায়নিক বিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায় এবং পেছন দিয়ে বেরিয়ে আসে। এই বিক্রিয়ার কারণেই রকেট সামনের দিকে চলতে শুরু করে। এটি স্যার আইজ্যাক নিউটনের গতির তৃতীয় সূত্রের একটি চমৎকার উদাহরণ। রকেটের পিছে ধাক্কা দিয়ে উপরে ওঠার শক্তিকে পাউন্ডের সাহায্যে মাপা হয়। ১পাউন্ড হলোঃ ১পাউন্ডের বস্তুকে মধ্যাকর্ষনের বিরুদ্ধে স্থির রাখতে যতটুকু বল দরকার ততটুকু। রকেটের সামনে যাওয়ার এই ধাক্কা’র জন্যে ২ ধরনের জ্বালানি ব্যবহার করে। কঠিন জ্বালানি অথবা তরল জ্বালানি(LOX)। রকেট কী ধরনের জ্বালানি ব্যবহার করবে এই নিয়মানুসারে একে দুটি শ্রেণিতে ভাগ হয়েছে।
কঠিন পদার্থের জ্বালানি ব্যবহৃত রকেট
[সম্পাদনা]কঠিন জ্বালানি ব্যবহৃত রকেটই ইতিহাসের সর্বপ্রথম রকেট। এই রকেট প্রথম প্রাচীন চীনাদের দ্বারা আবিষ্কৃত হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত ব্যবহৃত হচ্ছে। যে সব রাসায়নিক পদার্থ রকেটের কঠিন জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয় ঠিক সেরকম কিছু পদার্থ বারুদ তৈরীতেও ব্যবহার করা হয়। যাই হোক, রকেট আর বারুদের রাসায়নিক গঠন পুরোপুরি এক নয়। রকেট তৈরী করার জন্য দরকার পুরোপুরি শুদ্ধ জ্বালানি। কিন্তু বারুদ তৈরীতে তার প্রয়োজন হয় না। কেননা বারুদ বিস্ফোরিত হয় যা রকেটের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা একেবারেই প্রযোজ্য নয়। তাই রকেটের জ্বালানি তৈরীতে কিছু পরিবর্তন আনতে হয়েছে যার জন্য জ্বালানি তাড়াতাড়ি পুড়বে কিন্তু বিস্ফোরিতো হবেনা। কিন্তু এরকম রকেট ইঞ্জিনের একটি বড় সমস্যা আছে। এদেরকে একবার চালু করা হলে আর থামানো যায়না। অর্থাৎ এরা আর নিয়ন্ত্রণে থাকেনা। তাই, এরকম রকেট মিসাইল ছুড়তে ব্যবহার করা হয় অথবা অনেক সময় মহাকাশজানের সহায়ক হিসেবে পাঠানো হয়।
তরল পদার্থের জ্বালানি ব্যবহৃত রকেট
[সম্পাদনা]এই ধরনের রকেট প্রথম রবার্ট গডার্ড ১৯২৬ সালে প্রথম আবিষ্কার করেছিলেন। এধরনের রকেটের নকশা উপলব্ধি করা মোটামুটি সহজ। জ্বালানি এবং জারক। Goddard প্রথম রকেট তৈরীর সময় পেট্রোল এবং তরল অক্সিজেন ব্যবহার করেছিলেন যা Combustion Chamber এ পাম্প করা হয়। এর ফলে যে রাসায়নিক বিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় তার জন্যে রকেট সামনে চলতে শুরু করে। রাসায়নিক বিক্রিয়ায় প্রসারিত গ্যাস একটি সরু নল দিয়ে প্রচন্ড বেগে বের হয় এবং রকেটও প্রচন্ড বেগে চলতে শুরু করে।
রকেট বডি
[সম্পাদনা]রকেটের বডি বা দেহ তেমন কোনো প্রভাবশালী জিনিস নয়। রকেটের দেহের কাজ হলো জ্বালানি ধারণ করা। আবার মাঝে মধ্যে এটি একটি ফাঁপা সিলিন্ডার হিসেবেও কাজ করে। কারণ এটি বায়ুর সঙ্গে যোগাযোগকৃত পৃষ্ঠিয় দেশকে হ্রাস করে। যাই হোক, রকেটের দৈর্ঘ্য বলে দেয় যে রকেটটি কীরকম কাজ করবে। রকেটের দেহ যত বড় হবে সেটি তত বেশি পৃষ্ঠীয়দেশ সৃষ্টি করবে। এর ফলে পৃষ্ঠিয়দেশ বড় হবে যার ফলে এটি সোজা পথে উড়বে। এ কারণেই, অনেক রকেটে পাখনা ব্যবহার করা হয় পৃষ্ঠীয়দেশ বাড়াবার জন্যে এবং রকেটের পশ্চাদ্ভাগ স্থির রাখার জন্যে।
নোজ কোণ
[সম্পাদনা]নোজ কোণ রকেটের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। নোজ কোণ দেখলেই বোঝা যায় এটি বায়ুমন্ডল জোর করে ভেদ করার জন্য তৈরী হয়েছে। অনেক বছর ধরে অনেক রকম নোজ কোণের নকশা তৈরী করা হয়েছে। যাই হোক, বেশিরভাগ নোজ কোণই বায়ুগতিবিদ্যা অনুযায়ী বন্দুকের বুলেটের নকল নকশা এর মতো হয়ে থাকে। কোনো রকেট কতো দ্রুত বায়ুমন্ডল ছেদ করবে তা নির্ভর করে নোজ কোণের উপর। রকেটের সুপার সনিক গতির জন্য নোজ কোণ হতে হবে শঙ্কু আকৃতিবিশিষ্ট্য। কেননা এটা খুব সহজে বায়ুমন্ডল ছেদ করতে পারে কোনো বাধা ছাড়াই। কিন্তু সাব-সনিক গতির জন্য দরকার গম্বুজাকৃতির নোজ কোণ। কেননা এটি সামান্য প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে কারণ এর পৃষ্ঠীয়দেশ বেশি বড় নয়।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাসমূহ
- FAA Office of Commercial Space Transportation
- National Aeronautics and Space Administration (NASA)
- National Association of Rocketry (USA)
- Tripoli Rocketry Association
- United Kingdom Rocketry Association
- Canadian Association of Rocketry
- Indian Space Research Organisation ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে
- তথ্যমূলক সাইটসমূহ
- Encyclopedia Astronautica - Rocket and Missile Alphabetical Index
- Gunter's Space Page - Complete Rocket and Missile Lists
- Rocketdyne Technical Articles
এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |